হাইড্রোমিটারের দ্বারা ব্যাটারির ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব (Specific Gravity) পরিমাপ করা হয়। কোনো একটি পদার্থের আপেক্ষিক গুরুত্ব বলতে 4° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট আয়তনের পানির ভরের সাথে সম আয়তন বিশিষ্ট কোন একটি পদার্থ কতগুণ ভারি বা হাল্কা বুঝায়। লেড-এসিড সেল (ব্যাটারি) চার্জের সময় ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব পরিমাপ করা প্রয়োজন । একটি পূর্ণ চার্জ ব্যাটারির ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.২-১.৩ হয়ে থাকে। হাইড্রোমিটারের ভিতরে একটি কাঁচের নল আছে যেখানে তিনটি অংশ লাল, সাদা এবং সবুজ রং দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। টেস্টটিউব এর সাহায্যে ব্যাটারি হতে ইলেকট্রোলাইট তুলে আপেক্ষিক গুরুত্ব মাপা হয়।
সঞ্চয়ী ব্যাটারি নির্দিষ্ট কার্যকালের পর সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে, ব্যাটারি দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্ষম থাকে। ব্যাটারি দীর্ঘ মেয়াদী ত্রুটিযুক্ত ভাবে কাজ করার জন্য নিয়মিতভাবে পরিচর্যা করাকে ব্যাটারির রক্ষণাবেক্ষণ বলে। একে ব্যাটারি সার্ভেসিংও বলে। লেড-এসিড ব্যাটারির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যাটারির কার্যকারীতা বৃদ্ধি করে এবং ব্যাটারিকে
দীর্ঘস্থায়ী করে। এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হলো- ১. ব্যাটারি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর্দ্র ও স্যাতস্যাতে জায়গায় ব্যাটারি রাখা যাবে না।
২. সঠিক পোলারিটি, সঠিক ভোল্টেজ ও কম কারেন্ট এ চার্জ করতে হবে। মোচার্জিং ব্যাটারিকে দীর্ঘস্থায়ী
করে। ৩. চার্জের সময় হাইড্রোমিটার দিয়ে প্রতিটি সেলের এসিডের আপেক্ষিক গুরুত্ব মাপতে হবে।
৪. ডিসচার্জ অবস্থায় ব্যাটারি ফেলে রাখা যাবে না এবং কম চার্জে ব্যাটারি ব্যবহার করা যাবে না অর্থাৎ প্রতিটি সেলের ভোল্টেজ ১.৮ ভোল্টের নিচে হলে। এ অবস্থায় ব্যাটারি চার্জ করতে হবে।
৫. ব্যাটারি ব্যবহারকালে সঠিকভাবে টার্মিনালে সংযোগ দিতে হবে।
৬. ব্যাটারির সেলসমূহে এসিড লেভেল কমলে বিশুদ্ধ বা পাতিত (Distilled) পানি এমনভাবে দিতে হবে যেন প্লেটসমূহ ১৫ মি.মি. এসিডে ডুবে থাকে।
৭. ডিসচার্জ রেট বা লোড অ্যাম্পিয়ার বেশি হওয়া চলবে না।
৮. ব্যাটারি প্রতিনিয়ত ওভারচার্জ করা যাবে না। ৯. ব্যাটারি ডিসচার্জ হওয়ার আগেই সঠিকভাবে চার্জ করলে ব্যাটারির কর্মক্ষমতা বাড়ে।
১০. ব্যাটারির উপর কোন ধাতব পদার্থ পড়লে ব্যাটারি শর্ট হতে পারে। সেজন্য সাবধান থাকতে হবে।
১১. ব্যাটারি রোদে রাখা যাবে না।
ব্যাটারির রেটিং বলতে উহার ভোল্টেজ, অ্যাম্পিয়ার-আওয়ার ক্যাপাসিটি, ডিসচার্জ হার বা রেট ইত্যাদিকে বোঝায়। একটি ব্যাটারির রেটিং এ উহার ভোল্টেজ ক্যাপাসিটি, অ্যাম্পিয়ার আওয়ার ক্যাপাসিটি অর্থাৎ কত ঘণ্টায় কী পরিমাণ অ্যাম্পিয়ার সরবরাহ দিতে সক্ষম। একটি ব্যাটারির রেটিং ১২ ভোল্ট, ৮০ অ্যাম্পিয়ার আওয়ার বলতে বোঝায়, উহা ১২ ভোল্টের লোডে ৮ অ্যাম্পিয়ার হারে ১০ ঘণ্টা বা ১০ অ্যাম্পিয়ার হারে ৮ ঘণ্টা চলতে সক্ষম।
ব্যাটারির রেটিং দুই ভাবে প্রকাশ করা হয়। (ক) ভোল্টেজ রেটিং এবং (খ) কারেন্ট রেটিং
কারেন্ট রেটিংঃ কোন নির্দিষ্ট হারে ব্যবহৃত সময়ে কারেন্ট সরবরাহের ক্ষমতাকে ব্যাটারীর কারেন্ট রেটিং বলে। ইহা ব্যাটারির গঠন এর উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ সেলে ব্যবহৃত এ্যাকটিভ পদার্থের পরিমাণ ও গুণাগুণের উপর নির্ভর করে। ভোল্টেজ রেটিংঃ কোন নির্দিষ্ট হারে ব্যবহৃত সময়ের জন্য ভোল্টেজ সরবরাহের ক্ষমতাকে ব্যাটারির
ভোল্টেজ রেটিং বলে। ইহা ব্যাটারিতে ব্যবহৃত এ্যাকটিভ পদার্থের ধরণ ও গুণাগুণের উপর নির্ভর করে।
ব্যাটারির ক্যাপাসিটি বা ক্ষমতা অ্যাম্পিয়ার আওয়ারে প্রকাশ করা হয়। চার্জযুক্ত একটি ব্যাটারি যে পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি (অ্যাম্পিয়ার আওয়ার) সরবরাহ করতে সক্ষম তাকে ব্যাটারির ক্যাপাসিটি বলে। অর্থাৎ কোন ব্যাটারি প্রতি ঘণ্টায় যত অ্যাম্পিয়ার সরবরাহ করতে পারে সেটাই ঐ ব্যাটারির ক্ষমতা। ইহাকে AH দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ১০ ভোল্ট, ১২.০ অ্যাম্পিয়ার ক্যাপাসিটির একটি ব্যাটারি ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে সক্ষম হলে তার রেটিং হবে, ১০ ভোল্ট, ১২০ অ্যাম্পিয়ার আওয়ার ।
ব্যাটারির ক্যাপাসিটি যে বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে: ব্যাটারির ক্ষমতা নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে-
(ক) প্লেটের সাইজের উপর
(খ) প্রতি সেলে প্লেটের সংখ্যার উপর
(গ) এসিডের পরিমাণ ও ঘনত্বের উপর
(ঘ) তাপমাত্রার উপর
(ঙ) ডিসচার্জ হারের উপর।
আরও দেখুন...